Monday, 25 October 2010

 বামবা-এলসিএস গিল্ড শিল্পী স্বার্থ সংরক্ষণে এক হয়ে কাজ করার ঘোষণা

বামবা-এলসিএস গিল্ড

নতুন প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এলসিএস (লিরিসিস্ট, কম্পোজার, সিঙ্গার) গিল্ড এবং বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) গায়ক-গায়িকা, শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারদের স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষায় এখন থেকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এ নিয়ে এরই মধ্যে দুই সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা ক্লাবে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বামবা ও এলসিএস গিল্ড একসঙ্গে কাজ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট রেজিস্ট্রার মো. মনজুরুর রহমান, অনিক এইচ খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অনিক এইচ খানের উপস্থাপনায় উঠে আসে বাংলাদেশের গানের বাজারের কপিরাইট-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের নানা চিত্র। একই সঙ্গে উন্নত বিশ্বে সংগীত ও শিল্পীকেন্দ্রিক আইন ও তার সঠিক ব্যবহারের উদাহরণ। সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে মেধাস্বত্ব (ইনটেল্যাকচুয়াল কপিরাইট) আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একাধিক কার্যক্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়।
দেশে কপিরাইট আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুই সংগঠনের সভাপতি হামিন আহমেদ (বামবা) এবং আলাউদ্দিন আলীর (এলসিএস গিল্ড) একাত্মতা প্রকাশকে সংগীতাঙ্গনের জন্য একটি মাইলফলক ঘটনা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মত প্রকাশ করেছেন ।
শুরুতে শিল্পী রফিকুল আলম বলেন, ‘কপিরাইট রেজিস্ট্রার মনজুরুর রহমান অনেক দিন ধরেই বলছিলেন, সব আইন আপনাদের পক্ষে। তবে এর জন্য আপনাদের একটু সোচ্চার হতে হবে, এক হতে হবে। এভাবে অনেকে আমাদের বিচ্ছিন্নভাবে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বারবার শিল্পীরা দুস্থ হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। অথচ একজন সাবিনা ইয়াসমিন, আজম খান, বিপুল ভট্টাচার্য কিংবা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর গান বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অন্যপক্ষ। আমরা এক হয়ে এদের দুর্গটা ভাঙতে চাই। আমাদের জন্য না হোক, নতুন প্রজন্মের জন্য হলেও কপিরাইট আইনের বাস্তবায়ন করতে চাই।’ এ প্রসঙ্গে রফিকুল আলম উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সম্প্রতি আলী আকরাম শুভর সুরে এন্ড্রু কিশোর ও কনক চাঁপার একটি গান বেশ হিট হয়েছে। “কি যাদু করেছো বলো না” শীর্ষক এ গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। গানটি শুধু একটি মোবাইল কোম্পানি থেকে ৮৮ হাজার মোবাইল ব্যবহারকারী ডাউনলোড করেছেন। প্রতিটি ডাউনলোডে গ্রাহক দিয়েছেন ন্যূনতম ৫০ টাকা করে। অথচ যারা গানটির স্রষ্টা ও গায়ক-গায়িকা, তাঁদের পকেটে একটা টাকাও আসেনি। আমাদের হিসাবে, গত পাঁচ-ছয় বছরে এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা ওরা কামিয়ে নিয়েছে। আর আমরা সাবিনা ইয়াসমিন থেকে বিপুল ভট্টাচার্য পর্যন্ত শিল্পীদের চিকিত্সার তহবিল সংগ্রহে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি।’ বামবার সভাপতি হামিন আহমেদও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পাশের দেশ ভারতে এখন গাড়িতে কিংবা রেস্টুুরেন্টে গান বাজালে সেটার রয়্যালটি দিতে হয়। অথচ এখানে চলছে উল্টো প্রথা। আমাদের দেশে আইন আছে, প্রয়োগ নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও উদাসীনতা রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশের জন্ম থেকেই সংগীতশিল্পীরা নানাভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। আমরা খুবই আনন্দিত যে আজ (রোববার) থেকে একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। আশা করছি দুইপক্ষ এক হয়ে বিষয়গুলোর যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছতে পারব।’
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কথা না বলে আসলে সবার একটি প্লাটফর্মে এসে কথা বলা উচিত। তবে তিনি বলেন, ‘কপিরাইট বেশি মানতে গেলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনেক কিছুই ঠিকভাবে ঠিক সময়ে পৌঁছবে না। তাই যাদের বিরুদ্ধে শিল্পী, গীতিকার এবং সুরকারদের অভিযোগ রয়েছে, সেটা সমঝোতার মধ্য দিয়েই সমাধান করা উচিত বলে মনে করছি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত উভয় সংগঠনের সদস্যরা দুই সংগঠনের একাত্মাকে সাধুবাদ জানান। এঁদের মধ্যে আছেন গাজী মাজহারুল আাানোয়ার, ফেরদৌস আরা, সুবীর নন্দী, সৈয়দ আব্দুল হাদী, রফিকুল আলম, নিলু বিল্লাহ, আবিদা সুলতানা, ফকির আলমগীর, খুরশিদ আলম, শাম্মী আখতার, মিল্টন খন্দকার, কনক চাঁপা, মঈনুল হোসেন, শেখ সাদী খান, মানাম আহমেদ, এন্ড্রু কিশোর, আইয়ুব বাচ্চু, বারী সিদ্দিকী, তিমির নন্দী, মুন্সী ওয়াদুদ, ফুয়াদ নাসের বাবু, মাকসুদুল হক, আশরাফ বাবু, অর্থহীন-এর সুমন, শিরোনামহীন-এর তুহিন, ইথুন বাবু, পিয়ারু খান, রবি চৌধুরী, সুজিত মোস্তফা, রিজিয়া পারভীন, ফাহমিদা নবী, পল্লব সান্যাল, রোমানা ইসলাম, নাসিম আলী খান, রুক্সি, লিটন অধিকারী রিন্টু, মান্নান মোহাম্মদ, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, আলম আরা মিনু, সেলিম আশরাফ, শাহনাজ বেলী, তিশমা, প্রীতম, মিতালী, শফিক তুহিন, জাহাঙ্গীরসহ আরও অনেকে। শিল্পী রফিকুল আলম অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

Blog Archive